এনলাইটেন্ড সাইকাট্রিক হাসপাতাল বিশ্বাস করে, আসক্তি ও মানসিক সমস্যা থেকে সুস্থতা পেতে হলে সহানুভূতি, দক্ষতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম এমনভাবে গঠিত যাতে আসক্তির মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করা যায় — এবং মানুষ যেন সম্মান ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারে।

মাদকাসক্তির চিকিৎসা

আসক্তি হলো এক জটিল অবস্থা, যা শরীর, মন এবং আত্মাকে প্রভাবিত করে। আমাদের বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ডি-অ্যাডিকশন প্রোগ্রাম একটি নিরাপদ, পর্যায়ক্রমিক ও গঠনমূলক রিকভারির জন্য পথ তৈরি করে।

আমাদের মাদকাসক্তির চিকিৎসার মূল উপাদানসমূহ

আমাদের কার্যক্রম ব্যক্তির পুরো সুস্থতার যাত্রাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা — কেউ প্রথমবার সহায়তা নিতে আসা থেকে শুরু করে আমাদের তত্ত্বাবধান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরে পর্যন্তও চলতে থাকে। চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এবং মানসিক-আত্মিক সহায়তার সমন্বয়ে আমরা একজন ব্যক্তিকে আসক্তি থেকে মুক্ত করে একটি সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন গঠনে সহায়তা করি।

১. চিকিৎসাধীন ডিটক্সিফিকেশন (Medical Detoxification)

ডিটক্স হলো আসক্তি থেকে শারীরিক নির্ভরতা কাটানোর প্রথম ধাপ।

  • ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদভাবে উইথড্রয়াল লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে আমাদের একটি অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সিং টিম রয়েছে।
  • প্রয়োজনে উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, খিঁচুনি কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়।
  • যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুষ্টি সরবরাহ ও পানিশূন্যতা দূরীকরণ চিকিৎসাও এখানেই প্রদান করা হয়।

২. ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং

শরীর সুস্থ হলে মন নিয়ে কাজ শুরু হয়।

  • অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্ট বা অ্যাডিকশন কাউন্সেলরের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান সেশন পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য আমাদের পুরুষ রোগির জন্য পুরুষ সাইকোলজিস্ট ও মহিলা রোগীর জন্য মহিলা সাইকোলজিস্ট রয়েছে।
  • সেশনগুলোতে আসক্তির পেছনের কারণ, যেমন—মানসিক আঘাত, মানসিক কষ্ট, আত্মসম্মানের অভাব বা অন্যান্য মানসিক রোগ বিশ্লেষণ করা হয়।
  • রোগী নিজের আচরণ বুঝতে শেখে, ট্রিগার চিহ্নিত করে এবং উপকারী মানসিক দক্ষতা গড়ে তোলে।
  • কাউন্সেলিং আত্মবিশ্বাস ও লক্ষ্য স্থির করতেও সাহায্য করে।

৩. গ্রুপ থেরাপি

সহযোগিতা ও সম্পর্কের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ আরও সহজতর হয়।

  • মাদকাসক্তির প্রায় একই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি নিরাপদ পরিবেশে খোলামেলা আলোচনা হয়।
  • পারস্পরিক সহানুভূতি ও উদ্দেশ্যবোধ তৈরি হয়।
  • থেরাপিস্টের নির্দেশনায় সবাই মনের ভাব প্রকাশ, সহায়তা আদান-প্রদান এবং দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে।
  • আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে থাকে আত্মসচেতনতা, ট্রিগার চেনা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও সম্পর্ক দক্ষতা।

৪. পারিবারিক থেরাপি

আসক্তির প্রভাব কেবল ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবারে পড়ে। তাই,

  • পরিবারকে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যুক্ত করলে স্থায়ী আরোগ্য ও সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।
  • পারিবারিক সেশনে যোগাযোগের ঘাটতি, পুরনো ক্ষোভ ও পারস্পরিক আচরণ নিয়ে কাজ করা হয়।
  • পরিবারকে শেখানো হয় কীভাবে উনারা ব্যাক্তিকে সহায়তা করতে পারেন।
  • খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমা ও সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হয়।

৫. রিল্যাপ্স প্রতিরোধ পরিকল্পনা

নেশা ছাড়ার চেয়ে তা ধরে রাখার সংগ্রাম অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

  • প্রতিটি রোগীর জন্য একটি ব্যক্তির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী একটি রিল্যাপ্স প্রতিরোধ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
  • এতে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি, আগাম লক্ষণ, এবং স্ট্রেস মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ করা হয়।
  • রোগীরা শেখে ইমোশন ম্যানেজমেন্ট, সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি এবং উত্তম বিকল্প।
  • তারা একটি সহায়তামূলক নেটওয়ার্ক ও রিসোর্স তালিকাও তৈরি করে।

৬. পরবর্তী সহায়তা (Aftercare Support)

আরোগ্য মানে শুধু হাসপাতাল ছাড়ার আগ পর্যন্ত নয় — এটি সারা জীবনের যাত্রা।

  • রোগীরা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়ে পুনরায় আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সহায়তা চালু রাখা হয়।
  • আউটপেশেন্ট থেরাপি, রেগুলার চেক-ইন এবং সাপোর্ট গ্রুপে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।
  • পরিবার শিক্ষাক্রম, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং সামাজিক ভূমিকায় পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়।

আমরা যেসব আসক্তি চিকিৎসা করি

আমরা নিম্নোক্ত আসক্তি ও নির্ভরতার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ:

  • মদ্যপান (Alcohol) – দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি লিভার ক্ষয়, খিঁচুনি ও গুরুতর মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • প্রেসক্রিপশন ওষুধ – যেমন ব্যথানাশক, ঘুমের ওষুধ বা স্টিমুল্যান্ট, যেগুলো বৈধ হলেও অনেক সময় অপব্যবহারে আসক্তি তৈরি হয়।
  • ক্যানাবিস (মারিজুয়ানা) – সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হলেও দীর্ঘ ব্যবহারে মানসিক স্থিতি ও স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব ফেলে।
  • অপিওয়েডস – যেমন হেরোইন, মরফিন, কোডিন, ও সিন্থেটিক ওষুধ (যেমন ফেন্টানিল), যা অত্যন্ত আসক্তিকর।
  • অন্যান্য পদার্থ – কোকেইন, মেথঅ্যামফেটামিন, ইনহেল্যান্টস, সিন্থেটিক ড্রাগস (যেমন স্পাইস, বাথ সল্ট), বা একাধিক ড্রাগের একসঙ্গে ব্যবহার (পলিড্রাগ অ্যাবিউজ)।

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা

আমরা রোগীকে কেবল একটি রোগ দ্বারা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দেখি। তাই আমাদের মনোচিকিৎসা ব্যবস্থা কেবল উপসর্গ নয়, বরং সমস্যার জৈবিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক এবং প্রয়োজনে আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে সমন্বিতভাবে বিবেচনায় নিয়ে পরিচালিত হয়।

আমরা বিভিন্ন মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার জন্য বিশেষায়িত ও সহানুভূতিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। এর মধ্যে রয়েছে:

ডিপ্রেশন (অবসাদ)

দীর্ঘস্থায়ী দুঃখবোধ, হতাশা, আগ্রহহীনতা ও নিরুৎসাহিত ভাব যা ঘুম, ক্ষুধা, শক্তি ও সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। আমরা থেরাপি, ওষুধ ও জীবনযাপনভিত্তিক সহায়তার মাধ্যমে রোগীকে জীবনের অর্থ ও আনন্দ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করি।

অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার (উদ্বেগজনিত ব্যাধি)

এর মধ্যে রয়েছে জেনারেলাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (GAD), প্যানিক অ্যাটাক, ফোবিয়া ও সোশ্যাল অ্যাংজাইটি। লক্ষণগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ও শারীরিক উপসর্গ (যেমন হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিতে পারে। আমাদের চিকিৎসা কগনিটিভ থেরাপি ও রিলাক্সেশন টেকনিকের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার

অত্যধিক মানসিক উচ্চাবস্থা (ম্যানিয়া) থেকে গভীর বিষণ্নতা পর্যন্ত চরম মুড সুইং। আমরা ওষুধের মাধ্যমে মুড স্ট্যাবিলাইজেশন, সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক শিক্ষা ও সহায়ক থেরাপির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ভারসাম্য নিশ্চিত করি।

স্কিজোফ্রেনিয়া

একটি গুরুতর মানসিক রোগ, যেখানে হ্যালুসিনেশন, ভ্রান্ত ধারণা ও বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা দেখা যায়। আমরা প্রারম্ভিক শনাক্তকরণ, ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ, পারিবারিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে রোগীকে কার্যকর ও সম্মানজনক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি।

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD)

অবাঞ্ছিত চিন্তা ও বাধ্যতামূলক আচরণ। আমরা CBT ও এক্সপোজার রেসপন্স প্রিভেনশন (ERP)-এর মতো বৈজ্ঞানিক থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে নিজের চিন্তা ও আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সাহায্য করি।

পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার

যেমন বর্ডারলাইন, নার্সিসিস্টিক, অ্যাভয়ডেন্ট ইত্যাদি — এগুলো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ চিন্তা ও আচরণের প্যাটার্ন। আমরা আত্মজ্ঞান, সম্পর্ক গঠনের দক্ষতা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি সাধন করি।

ট্রমা ও PTSD (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার)

নির্যাতন, সহিংসতা, দুর্ঘটনা বা হারানোর অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া মানসিক আঘাত। আমরা প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট দ্বারা ট্রমা-সচেতন পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিই, যাতে ফ্ল্যাশব্যাক, ভয় ও অনুভূতিশূন্যতা কমানো যায়।

আমাদের মনোচিকিৎসা সেবা

প্রতিটি রোগীর চাহিদা ও অবস্থার জটিলতা অনুযায়ী, আমরা বহুমাত্রিক সেবা প্রদান করি, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

মানসিক মূল্যায়ন ও নির্ণয়

অনভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট দ্বারা সুস্পষ্ট মূল্যায়ন ও নির্ভুল রোগনির্ণয় করা হয় — যা সঠিক চিকিৎসার ভিত্তি।

ওষুধ ব্যবস্থাপনা

যখন প্রয়োজন হয়, সুনির্দিষ্ট ও নিরাপদভাবে ওষুধ দেওয়া হয় — মুড নিয়ন্ত্রণ, উপসর্গ কমানো এবং দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা উন্নয়নের জন্য। প্রয়োগের পর প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হয়।

কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT)

একটি প্রমাণিত ও কার্যকর থেরাপি, যা নেতিবাচক চিন্তা বদল, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া গঠন এবং মানসিক সক্ষমতা গড়ে তোলে। ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, OCD ও PTSD-এর জন্য উপযোগী।

সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং

স্বীকৃত মনোবিজ্ঞানী ও কাউন্সেলরের নেতৃত্বে একক, পারিবারিক ও গ্রুপ থেরাপি প্রদান করা হয় — যা আত্ম-অনুসন্ধান, আবেগ নিরাময় ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের সুযোগ দেয়।

অকুপেশনাল ও রিক্রিয়েশনাল থেরাপি

মানসিক অসুস্থতা দৈনন্দিন কাজ ও জীবনের আনন্দকে ব্যাহত করতে পারে। আমরা সৃজনশীল ও জীবনদক্ষতা ভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস, সামাজিক সম্পৃক্ততা ও জীবনের উদ্দেশ্য ফিরিয়ে আনি।

জরুরি মানসিক সহায়তা

আত্মহত্যার চিন্তা, মানসিক ভেঙে পড়া বা সাইকোটিক পর্বে রোগীর জন্য আমরা দ্রুত চিকিৎসা, নিরাপদ পরিবেশ ও আবেগিক সহায়তা প্রদান করি।

শুরু হোক আরোগ্যের যাত্রা

সুস্থতার শুরু হয় একটি ছোট পদক্ষেপ থেকে। আপনি যদি আসক্তি, মানসিক সমস্যা বা উভয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, এনলাইটেন্ড সাইকাট্রিক হাসপাতাল আপনার পাশে আছে প্রতিটি ধাপে।
আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত — যেন আপনার প্রিয়জন আবারও খুঁজে পান জীবনের অর্থ, প্রশান্তি ও সম্ভাবনা।

📞 আজই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন — পরামর্শ নিতে অথবা আমাদের সেবাসমূহ সম্পর্কে আরও জানতে।