মুড সুইং কি, কেন, লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ

মুড সুইং কি, কেন, লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ

আপনি কি কখনো এমন দিন কাটিয়েছেন যেখানে সকালে আপনি দারুণ উৎফুল্ল, কিন্তু দুপুরে হঠাৎ বিষণ্নতা আপনাকে গ্রাস করেছে? অথবা এক মুহূর্তে কাউকে ভালোবাসছেন, পরের মুহূর্তেই রাগে ফেটে পড়ছেন? এ ধরনের আচরণ অনেক সময়ই হালকা ভাবে নিই আমরা, কিন্তু বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই মুড সুইং সমস্যায় প্রতিনিয়ত ভুগছেন—কখনো নিজের অজান্তেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতি ৫ জনের ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আবেগজনিত অস্থিরতা বা মুড ডিসঅর্ডারের সম্মুখীন হন, যার অন্যতম রূপ মুড সুইং। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি সমীক্ষা (NIH, 2023) অনুযায়ী, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৪০%-এর বেশি ব্যক্তি বছরে কমপক্ষে একবার তীব্র মুড সুইংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা ভবিষ্যতে বিষণ্নতা বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের পূর্বাভাস হতে পারে।

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এক গবেষণায় দেখা গেছে—একজন ব্যক্তির মুড দিনে গড়ে ২০ বার পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে, যা তার সম্পর্ক, কাজ এবং আত্মসম্মানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

এই পরিসংখ্যানগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—মুড সুইং শুধু ‘মেজাজ খারাপ’ নয়, বরং এটি হতে পারে একটি গভীর মানসিক ইঙ্গিত। তাই এই প্রবন্ধে আমরা জানব মুড সুইং কী, কেন হয়, এর লক্ষণ, এবং কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়—একটি সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত আলোচনার মাধ্যমে।

Table of Contents

মুড সুইং কী?

“মুড সুইং” বলতে মানসিক অবস্থার দ্রুত ও আকস্মিক পরিবর্তনকে বোঝায়। কখনও খুব আনন্দিত থাকা, পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ রাগ, হতাশা কিংবা উদ্বেগ অনুভব করাই এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য। মুড সুইং একটি সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা হলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র হলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত হতে পারে।

মুড সুইং কেন হয়?

মুড সুইং বা মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন অনেক সময় সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া হলেও, এটি যখন বারবার ঘটে, তখন সেটি নানা শারীরিক, মানসিক বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে। নিচে মুড সুইংয়ের প্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

১. হরমোনজনিত পরিবর্তন

হরমোন হলো শরীরের রাসায়নিক বার্তাবাহক। এদের ওঠানামা সরাসরি মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে।

◾ কিশোর-কিশোরীর বয়সে (Puberty)

এই সময়ে এস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরনসহ বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা দ্রুত ওঠানামা করে, যার ফলে হঠাৎ মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া, রাগ বা বিষণ্নতা দেখা যায়।

◾ মাসিকচক্র ও পিএমএস (Premenstrual Syndrome)

নারীদের মাসিকের পূর্ববর্তী ও চলাকালীন সময়ে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের ফলে মন খারাপ, অস্থিরতা বা আবেগপ্রবণতা হতে পারে।

◾ গর্ভাবস্থা ও মেনোপজ

এই সময়গুলোতেও প্রচুর হরমোন পরিবর্তন হয়, যা আবেগের ওঠানামায় ভূমিকা রাখে।

২. ঘুমের অভাব ও অপ্রতুল বিশ্রাম

ঘুম না হলে মস্তিষ্কের আবেগ-নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (amygdala ও prefrontal cortex) সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে মানুষের সহনশীলতা কমে যায়, এবং রাগ, হতাশা বা অস্থিরতা দ্রুত প্রকাশ পায়।

৩. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

দীর্ঘ সময় ধরে চাপ বা দুশ্চিন্তা থাকলে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বৃদ্ধি পায়, যা আবেগের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে মেজাজ দ্রুত পরিবর্তনশীল হয়ে পড়ে।

৪. খাদ্যাভ্যাস ও রক্তে গ্লকোজের ওঠানামা

সুগার বা কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং পরে দ্রুত কমে যায়। এই ওঠানামা মস্তিষ্কে ‘energy crash’ তৈরি করে, যার ফলে ক্লান্তি, বিরক্তি ও মুড সুইং হয়।

৫. মাদক বা নিকোটিনের প্রভাব

মদ, গাঁজা, ইয়াবা বা অন্যান্য মাদক গ্রহণ মস্তিষ্কের রসায়ন পরিবর্তন করে, যা মুড সুইং-এর বড় কারণ হতে পারে। ধূমপান বা ক্যাফেইনের অতিরিক্ত ব্যবহাও একই রকম প্রভাব ফেলে।

৬. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

মুড সুইং অনেক সময় গভীর মানসিক রোগের উপসর্গ হতে পারে, যেমন, বাইপোলার ডিসঅর্ডারঃ এই রোগে ব্যক্তি কখনও অতিমাত্রায় আনন্দিত (mania), আবার কখনও অতিমাত্রায় বিষণ্ন হয়ে পড়েন। বা বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD)ঃ এই রোগে আবেগ অত্যন্ত অস্থির থাকে এবং তাৎক্ষণিক মুড পরিবর্তন ঘটে। যেমন, ডিপ্রেশন ও এংজাইটিঃ দীর্ঘদিনের বিষণ্নতা বা উদ্বেগের রোগীদের মাঝেও দ্রুত মুড বদলের প্রবণতা দেখা যায়।

৭. নিউরোলজিকাল সমস্যা ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু নিউরোলজিকাল রোগ যেমন পারকিনসনস, আলঝেইমার, বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে মুড সুইং দেখা যায়। কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, থাইরয়েড হরমোন বা ঘুমের ওষুধ আবেগে প্রভাব ফেলে।

৮. ব্যক্তিত্ব গঠন ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের অভাব

অনেকের ব্যক্তিত্বে আবেগ নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি থাকতে পারে, যেমন– যারা সহজেই রেগে যান বা হতাশ হয়ে পড়েন। জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা যেমন– ট্রমা, অবহেলা বা শৈশবের মানসিক চাপ, এসব আচরণকে আরও তীব্র করে তোলে।

৯. পরিবেশগত ও সামাজিক চাপ

নিয়মিত ঝগড়া, চাকরির অনিশ্চয়তা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, সামাজিক প্রত্যাশার চাপ ইত্যাদি কারণে আবেগের উপর ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে যায়, যা মুড সুইং বাড়ায়। 

মুড সুইং কাদের মাঝে বেশি দেখা যায়?

  • কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের
  • গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের
  • দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসে থাকা ব্যক্তিদের
  • হরমোনজনিত সমস্যা যেমন থাইরয়েডের রোগে আক্রান্তদের
  • মাদকসেবীদের মধ্যে

মুড সুইংয়ের লক্ষণ

মুড সুইং মানে হলো মনের আবেগ বা অনুভূতির হঠাৎ এবং অতিরিক্ত পরিবর্তন। এটি কোনো ব্যক্তি, ঘটনা, চিন্তা বা কখনো কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই হতে পারে। নিচে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:

১. হঠাৎ করেই মন-মেজাজের পরিবর্তন

এক মুহূর্তে ব্যক্তি আনন্দিত, উৎসাহী বা উদ্যমী থাকতে পারেন, আর পরের মুহূর্তেই হয়ে পড়েন চুপচাপ, বিষণ্ন বা বিরক্ত।
উদাহরণ: সকালে অফিস যেতে উদ্দীপনা থাকলেও দুপুরে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়া, কাজের প্রতি আগ্রহ হারানো।

২. অল্প কথায় রেগে যাওয়া বা খিটখিটে মেজাজ

মুড সুইং-এর সময় ব্যক্তির সহনশীলতা কমে যায়। ফলে সাধারণ কথাতেও রাগ উঠে যায় বা তারা বিরক্ত হয়ে পড়েন।
লক্ষণ: কথা বলার সময় স্বর উঁচু হয়ে যাওয়া, ধৈর্য হারিয়ে ফেলা।

৩. অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা

তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও অতিরিক্ত দুঃখ পাওয়া, কান্না করে ফেলা, হঠাৎ হাসিতে ফেটে পড়া বা একাকিত্ব অনুভব করা।
লক্ষণ: আবেগের মাত্রা বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হয়ে ওঠে।

৪. আত্মবিশ্বাস হ্রাস পাওয়া

হঠাৎ করে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা তৈরি হওয়া, “আমি কিছুই পারি না”, “সব ভুল হচ্ছে” ধরনের কথা মনে হওয়া।
এটি হতাশার লক্ষণেও পরিণত হতে পারে।

৫. ঘুম বা খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন

মুড সুইং থাকলে কারও ঘুম বেশি হয়ে যেতে পারে বা ঘুম কমে যেতে পারে। অনুরূপভাবে ক্ষুধা বাড়ে বা একদম কমে যায়।
উদাহরণ: একদিন প্রচুর খাওয়ার প্রবণতা, পরদিন একদম না খাওয়া।

৬. মোটিভেশন বা উদ্দীপনার অভাব

যে কাজটি আগের দিন ভালো লাগতো, হঠাৎ করেই তা একঘেয়ে বা বোঝা মনে হতে পারে।
লক্ষণ: প্রিয় কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, উদ্যম কমে যাওয়া।

৭. মানুষ এড়িয়ে চলা বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

মুড সুইং হলে অনেক সময় ব্যক্তি একা থাকতে চান, কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে না, এমনকি ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকেও দূরে সরে যেতে পারেন।

৮. মনোযোগের ঘাটতি ও সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা

কাজে মন বসে না, বারবার চিন্তা ছুটে যায়। অনেক সময় ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতেও অস্থিরতা দেখা দেয়।
উদাহরণ: কী খাওয়া হবে, কোথায় যাওয়া হবে—এইসব নিয়েও দ্বিধা তৈরি হওয়া।

৯. আত্মঘাতী চিন্তা (গভীর ক্ষেত্রে)

চরম বিষণ্নতা বা আবেগজনিত অস্থিরতায় আত্মঘাতী চিন্তা বা অনুভূতি তৈরি হতে পারে।
লক্ষণ: “এই জীবন রেখে লাভ কী?”, “সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে” ধরনের ভাবনা।

 এই লক্ষণটি অত্যন্ত গুরুতর। এ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত।

মুড সুইং এর লক্ষণগুলো ব্যক্তি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে যেগুলোর প্রভাব দৈনন্দিন জীবন, কাজ, সম্পর্ক এবং নিজের মনের স্থিতিতে ব্যাঘাত ঘটায়, সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। 

মুড সুইং নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী কিছু উপায়

মুড সুইং হালকা থেকে শুরু করে গভীর মানসিক সংকটের লক্ষণ হতে পারে। তবে নিয়মিত যত্ন ও সচেতনতায় তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে প্রমাণভিত্তিক কিছু উপায় দেওয়া হলো:

১. নিয়মিত ঘুম বজায় রাখা

ঘুমের সঙ্গে মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

  • প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত।
  • একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠার অভ্যাস গড়ে তুললে মুড স্থিতিশীল থাকে।
  • ঘুমানোর আগে মোবাইল/স্ক্রিন ব্যবহার কমানো, ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা সহায়ক।

২. সুষম খাদ্য গ্রহণ করা

রক্তে গ্লুকোজের ওঠানামা মুড সুইং তৈরি করতে পারে, তাই ব্যালান্সড ডায়েট খুব জরুরি।

  • কম চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করুন।
  • পর্যাপ্ত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ, বাদাম) গ্রহণ মস্তিষ্কের সুস্থতায় সাহায্য করে।
  • খাবার বাদ না দিয়ে সময়মতো খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৩. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

ব্যায়ামের সময় শরীরে এন্ডরফিন, ডোপামিন ইত্যাদি “ফিল গুড” রাসায়নিক নিঃসরণ হয় যা মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে।

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাটাহাটি, সাঁতার, সাইকেল চালানো বা হালকা ব্যায়াম করুন।
  • যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিংও মানসিক শান্তি দেয়।

৪. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও রিলাক্সেশন টেকনিক

আবেগের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • গভীর শ্বাস নেওয়ার কৌশল (Deep Breathing): ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়ুন।
  • মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস: প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে মনকে প্রশান্ত রাখার অনুশীলন করুন।
  • প্রার্থনা ও ধ্যান: অনেকে ধর্মীয় অনুশীলনেও মানসিক ভারসাম্য ফিরে পান।

৫. আত্ম-পর্যবেক্ষণ ও আবেগের ডায়েরি রাখা

নিজের আবেগের ওঠানামা, তার সময়, কারণ ও প্রতিক্রিয়া লিখে রাখলে তা বোঝা সহজ হয়।

  • প্রতিদিন কী কারণে মুড পরিবর্তন হলো তা সংক্ষেপে লিখে রাখুন।
  • কিছুদিন পরে একটি প্যাটার্ন পাওয়া যাবে, যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৬. পজিটিভ সেলফ-টক ও চিন্তাভাবনা চর্চা করা

নিজের সাথে সদয় ও গঠনমূলকভাবে কথা বলুন।

  • “আমি এটা পারব”, “এটা সাময়িক পরিস্থিতি”—এমন ভাবনা মেজাজ স্থির রাখতে সাহায্য করে।
  • নেতিবাচক ভাবনা যেমন “সব শেষ”, “আমি ব্যর্থ” — এগুলোর পরিবর্তে যুক্তিসঙ্গত বিকল্প ভাবুন।

৭. সামাজিক সংযোগ বজায় রাখা

আপনজনের সাথে কথা বলা, অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর।

  • বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
  • প্রয়োজনে কাউন্সেলিং গ্রুপে অংশগ্রহণ করুন।

৮. মাদক, অতিরিক্ত নিকোটিন ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা

এগুলো শুরুতে সাময়িক স্বস্তি দিলেও পরে মুড সুইং বাড়ায়।

  • ধূমপান ও অতিরিক্ত চা/কফি গ্রহণ কমিয়ে দিন।
  • মাদক গ্রহণ বন্ধের জন্য প্রফেশনাল সহায়তা গ্রহণ করা জরুরি

৯. প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা গ্রহণ

যদি মুড সুইং ঘন ঘন হয়, দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটে, অথবা আত্মঘাতী চিন্তা আসে, তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • সাইকোথেরাপি (বিশেষ করে CBT) আবেগ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • প্রয়োজনে চিকিৎসক ঔষধও দিতে পারেন, তবে তা অবশ্যই পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।

১০.  ধর্মচর্চা ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন

ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চা অনেক সময় মনের ভারসাম্য রক্ষা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে গভীর ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে—নিয়মিত ধর্মীয় চর্চাকারীদের মধ্যে স্ট্রেস হরমোন করটিসল তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং আবেগীয় অস্থিরতা অনেকটাই কম হয়।

  • নিয়মিত নামাজ, প্রার্থনা, কোরআন তিলাওয়াত—এইসব কাজ একাগ্রতা ও ধৈর্য বৃদ্ধি করে।
  • ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, রোজা রাখা, দান ও ক্ষমা আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায় এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক রাখে।

১১. ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT)

DBT হলো একটি প্রমাণভিত্তিক মনোরোগ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মূলত বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারতীব্র মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি যেকোনো আবেগ নিয়ন্ত্রণ সমস্যায় কার্যকর। গবেষণায় প্রমাণিত—১২ সপ্তাহের DBT সেশন ব্যক্তি মুড সুইং, রাগ, হতাশা ও আত্মঘাতী চিন্তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

DBT চারটি প্রধান স্কিল শিখায়:
  1. Mindfulness – বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ ধরে রাখা।
  2. Distress Tolerance – কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা গড়ে তোলা।
  3. Emotion Regulation – তীব্র আবেগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  4. Interpersonal Effectiveness – সম্পর্কের টানাপোড়েন দক্ষতার সঙ্গে সামলানো।
উপসংহার:

মুড সুইং আমাদের আবেগের এমন একটি দিক, যা অনেকেই উপেক্ষা করি — হয়তো “স্বাভাবিক মেজাজ” বলে এড়িয়ে যাই, অথবা লজ্জা ও ভুল বোঝাবুঝির ভয়ে চুপ থাকি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বারবার আবেগের হঠাৎ পরিবর্তন শুধু মনের অভ্যন্তরীণ সংকেতই নয়, বরং কখনো কখনো তা হতে পারে গভীর মানসিক অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ।

এর পেছনে থাকতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক চাপ, অতীত ট্রমা, বা এমনকি খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের ঘাটতি পর্যন্ত। আবার লক্ষণগুলোও নানারকম — হঠাৎ কান্না পাওয়া, তীব্র রাগ, ক্লান্তি বা হতাশায় ডুবে যাওয়া, যা ব্যক্তি নিজেও মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারেন না।

ভালো খবর হলো—এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, পজিটিভ চিন্তা, আত্ম-পর্যবেক্ষণ, ধর্মীয় অনুশীলন ও প্রমাণভিত্তিক থেরাপির (যেমন: CBT, DBT) মাধ্যমে মুড সুইং অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়।

মনে রাখবেন “আপনার আবেগ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না, বরং আপনিই আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *